শিশু-কিশোরদের কথা মনে হলে আমাদের হৃদয়ের মানস পটে যে ছবিটি ভেসে আসে, তা হলো হাসি-খুশিতে ভরা প্রাণোচ্ছ্বল একটি মুখ। সাধারন্ত শিশু-কিশোররা প্রাণবন্ত, উচ্ছ্বোসিত চেতনা তাদের প্রাত্যহিক জীবন ধারা। কিন্তু এর বিপরীত আবস্থা অবহেলার নয়। কখনো-কখনো শিশুদের মধ্যে কারো-কারোর হৃদয় দু:খ ভারাক্রান্ত, কোন কাজে তারা মন বসাতে পারে না। আমরা দেখি তাদের মধ্যে কেউ-কেউ বয়স্কদের মত গুরুতর বিষণ্নতায় স্বীকার যা তাদের স্বাভাবিক জীবন ধারা প্রবাহমান পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখা দেয়। ডিএসএম-৪ অনুযায়ী শিশুদের বিষণ্নতাকে বয়স্কদের বিষণ্নতার অধীনে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
শিশু-কিশোরদের বিষণ্নতার লক্ষণ : সাধারন্ত সাত থেকে সতের বছর বয়সের শিশুদের বিষণ্নতার লক্ষণ অনেকটা বয়স্কদের মতোই হয়ে থাকে।
শিশুদের বিষণ্নতার লক্ষণ সমূহ হলো-
১. কোন কিছুতে তারা যেন আনন্দের অনুভূতি খুঁজে পায় না,
২. সহজেই তারা কোন কাজে ক্লান্তি বোধ করে,
৩. তাদের মনোযোগ সমস্যা বিদ্যমান,
৪. তাদের বেশির ভাগই অপরাধবোধে আক্রান্ত,
৫. কোন ঘটনার নেতিবাচক দিকে তাদের মনোযোগ বেশি,
৬. বিষণ্ন শিশু কিশোরদের অনেকের মধ্যে আত্মহত্যা চিন্তা বিদ্যমান,
৭. দোষ আরোপণের সংস্কৃতিতে তারা আবদ্ধ,
৮. তাদের মধ্যে নিচু মাত্রার আত্মমর্যাদাবোধ প্রতীয়মান।
শিশু-কিশোরদের বিষণ্নতার কারণ :
১. বংশগত বা জিনসংক্রান্ত কারণ : পিতা- মাতার মধ্যে বিষণ্নতা থাকলে তাহা সন্তানদের প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ২. ত্রুটিপূর্ণ পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ : পিতা-মাতার সাথে শিশুর সম্পর্ক গোলযোগপূর্ণ হলে তাহা শিশুর মধ্যে বিষণ্নতার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
৩. সামাজিক দক্ষতার অভাব : শিশুর মধ্যে সামাজিক দক্ষতার অভাব থাকলে বিষণ্নতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
৪. পিতা- মাতার তিরস্কার ও সমালোচনা : পিতা- মাতা শিশুকে বিভিন্ন কাজে তিরস্কার ও সমালোচনা করলে-শিশুর সক্ষমতায় সন্দেহ সৃষ্টি হয় এবং আত্মাবমননার অনুভূতি তৈরি হয় যা শিশু-কিশোরদের মধ্যে বিষণ্নতার অনুভূতি তৈরি করতে পরে।
৫. আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক : বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শিশুর সম্পর্ক আনন্দদায়ক না হলে, শিশুর মধ্যে নেতিবাচক আত্মধারণা সৃষ্টি হয় যা শিশু-কিশোরদের মনের মধ্যে বিষণ্নতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
শিশু-কিশোরদের বিষণ্নতা দূর করার উপায়:
১. আন্ত:ব্যক্তিক চিকিৎসা: এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে সমবয়সীদের পীড়ন, পিতা-মাতা হতে বিচ্ছিন্নতা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সমস্যাকে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়।
২. শিশুর জ্ঞানীয় নেতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তন আনায়ন: অন্যের দোষ ধরার প্রবনতা, নিজেকে অযোগ্য মনে করা বা নেতিবাচক উদ্দীপকের দিকে মনোযোগ দেওয়ার প্রবনতাকে দূর করতে বিশেষ জ্ঞানীয় কাঠামোতে পরিবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহন করার মাধ্যমে শিশুর বিষণ্নতা দূর করা সম্ভব।
৩. শিশুর পিতা-মাতার নৈরাশ্যবাদ ধারণা দূরীকরণ: শিশুর প্রতি পিতা-মাতার বিরুপ মনোভাব দূরকরণের মাধ্যমে শিশুকে আনন্দঘন পরিবেশে প্রতিপালনের সুযোগ দানের মাধ্যমে বিষণ্নতা দূর করা সম্ভব।
আজকের শিশু- কিশোরা আগামী দিনের পথ প্রদর্শক। তাই তাদের সকল প্রকার কলুষমুক্ত জীবন ধারায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে জাতীর সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের সকলের দায়িত্ব। তাই আপনার সন্তানের কোন প্রকার মানসিক সমস্যা দেখা দিলে, দেরি না করে একজন দক্ষ মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ গ্রহন পূর্বক শিশুকে স্বাভাবিক জীবন ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ, খুলনা।
ফ্রি পরামর্শের জন্য কল করুন: ০১৭১৪৬১৬০০১
খুলনা গেজেট/এমএনএস